ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার: জাহাঙ্গীর আলম

দেশের বৃহত্তম সিটি করপোরেশন গাজীপুর। আগামী ২৫ মে এই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে। তবে নির্বাচনের আগে আলোচনা হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে। দল ও নির্বাচনের নানা বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং গত নির্বাচনের বিজয়ী মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।

দলীয় পদ হারিয়েছেন, মেয়র পদ হারিয়েছেন। সাধারণ সদস্য হিসেবে দলে ফিরলেও এখন কেমন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন?

জাহাঙ্গীর আলম: চ্যালেঞ্জ সব সময় কঠিন। দল থেকে ন্যায়বিচার পেয়েছি। দলের রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে আমাকে। তিন ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে মেয়র পদ থেকে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। যাঁরা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা কেউ গাজীপুরের নাগরিক নন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিতে উপস্থিত হয়ে অভিযোগের কাগজে নাম থাকা তিন ব্যক্তি বলেছেন, তাঁরা এমন কোনো অভিযোগ দেননি, তাঁদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে।

এমন এক উড়োচিঠির ভিত্তিতে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকারের অধীনে সারা দেশে ৬৬ হাজার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আছেন, সেখানে মন্ত্রণালয়ের এমন কাজ করার কী মানে আছে। তাহলে জনপ্রতিনিধির চেয়ার রাখার দরকার কী, প্রশাসনের লোকেরা জনপ্রতিনিধির চেয়ার চালাক, এসব ভোট করার কি দরকার আছে? এসব নাটকীয় ভোট, মানুষকে ঠকানোর মধ্যে ন্যায়বিচার কোথায় চাইব? ৯ মাসে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আর ১৬ মাসে একটা উড়োচিঠিতে আসা অভিযোগের বৈধতা নিশ্চিত করতে পারে না মন্ত্রণালয়। অর্থের বিনিময়ে হোক, ক্ষমতার বিনিময়ে হোক, অনেকে এমন অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত থাকে।

প্রধানমন্ত্রীকে যাঁরা মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন, তাঁদের বিচার হওয়া উচিত। একদিন তাঁদের বিচার হবে, এটা আমি বিশ্বাস করি। জীবনযুদ্ধের মধ্যে আছি। মিথ্যার সঙ্গে সত্যের যুদ্ধ চলছে। নিরপেক্ষ থাকার নামে অনেকে অন্যায়কে সমর্থন করছে এখন।

আওয়ামী লীগ থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র আপনি। এবার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে কতটা আশাবাদী?

জাহাঙ্গীর আলম: মানুষের মতামতের ভিত্তিতে মনোনয়নের বিষয়টি বিবেচনা করে দল। তাঁকেই মনোনয়ন দেয়, যাঁকে মানুষ ভোট দেবেন ও গ্রহণ করবেন; শতভাগ নয়, ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ যাঁকে সমর্থন দেন।

ভোটারদের মধ্যে যদি জরিপ করা হয়, অধিকাংশ মানুষ আমাকে সমর্থন দেবেন বলে আমার বিশ্বাস। এ বিশ্বাস থেকে আমি প্রত্যাশা করি, আমার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাকে মনোনয়ন দেবে, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে বেছে নেবেন।

দলীয় মনোনয়ন যদি না পান, তবু নির্বাচনে অংশ নেবেন?

জাহাঙ্গীর আলম: দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে আমি সর্বশেষ দেখব। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী আমার অভিভাবক। দেরিতে হলেও আমি ন্যায়বিচার পাব।

বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে। এতে নির্বাচন কতটা প্রতিযোগিতামূলক হবে?

জাহাঙ্গীর আলম: আমার গত নির্বাচনের সময় সব বিরোধী দল অংশ নিয়েছিল। তারা ভোট গণনা পর্যন্ত নির্বাচন মেনে নিয়েছিল। আমি সব সময় বিরোধী পক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলাম। আমার বিশ্বাস, আমি নৌকার মনোনয়ন পেলে সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। সব দলের আদর্শ ব্যক্তিরা ভোটে অংশ নেবেন।

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আপনার প্রত্যাশা কী?

জাহাঙ্গীর আলম: রাষ্ট্র, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে ভোট সুষ্ঠু করা। এটা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। ভোট যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার। অন্ধকার আমরা কেউ চাই না, আমরা আলোর দিকে যেতে চাই। স্বাধীন দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে চলবেন, স্বাধীনভাবে কর্ম করে খাবেন।

নিরপেক্ষ ভোটের জন্য ইভিএম ও সব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত সমর্থন করি। এসব ভালো কাজের মধ্যে কেউ যেন পচা কাজ করতে না পারে। কেউ যেন চুরির আশ্রয় না নিতে পারে। কোনোভাবেই কেউ যেন ক্ষমতা ব্যবহার করে অন্যায় না করতে পারে। সব মহল, সব পক্ষ যেন গাজীপুর সিটি নির্বাচনের দিকে খেয়াল রাখে। এটা তাদের দায়িত্ব।