৭ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর পঞ্চম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত মানসুরা হোসাইনের ফিচারধর্মী প্রতিবেদন ‘তবলায় ফুলের টব, পিয়ানোয় ধুলার আস্তরণ’ পড়ে শিক্ষায় সংস্কৃতিচর্চার গুরুত্ব এবং এ নিয়ে আমাদের কিছু প্রয়াসের কথা বলা যুক্তিযুক্ত হবে বলে মনে করছি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বিশ্বের বড় শিক্ষাদার্শনিকেরা শিশুর বিকাশে দুটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন—প্রকৃতির সান্নিধ্য ও সংস্কৃতিচর্চা।
এ প্রসঙ্গে কবি অনেক কথা বলেছেন। তার মধ্যে একটি বক্তব্য হলো সবকিছুর যেমন আধার থাকে, তেমনি শিক্ষার আধার হলো সংস্কৃতি। একজন শিক্ষার্থীর জীবনবোধ যদি সংস্কৃতিচেতনায় ঋদ্ধ না হয়, তাহলে চর্চিত বিদ্যা জীবনকে সুন্দরভাবে যাপনে সহায়ক হয় না—নিজের জীবনও নয়, অন্যেরও নয়।
আমরা সমাজে নানাভাবে এই সংবেদনশীল মন ও সংস্কৃতিচেতনার দৈন্যের প্রকাশ দেখতে পাই, যার অধিকাংশই অমানবিক নৃশংসতায় থাকে ভরা। এতে পুরো সমাজ এবং বিশেষভাবে কিশোর-তরুণসমাজ নিয়ে দুশ্চিন্তা কেবলই বাড়ছে।
আমাদের নাগরিক জীবন প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, গ্রামীণ জীবনে প্রকৃতির দাক্ষিণ্য থাকলেও প্রকৃতিমনস্ক হওয়া, প্রকৃতির নানা বৈচিত্র্য খেয়াল করা, উপভোগ করার মতো মন তৈরি হচ্ছে না।
বরং মানুষ দিন দিন অন্দরের প্রাণীতে পরিণত হচ্ছে। আকাশ-মাটি-প্রকৃতির বিশালতার বোধ, এ নিয়ে সচেতনতা, এর জন্য আকুলতার অভাব প্রকট হয়ে উঠছে। বহু আগে পড়েছিলাম ভি কিনস্কির তাত্ত্বিক বই ডোয়ার্ফিং অব ম্যান—রাষ্ট্র কীভাবে মানবের বামনায়ন ঘটায়। এদিকে প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন ব্রিটিশ দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিল।
তিনি লিখেছিলেন, যে রাষ্ট্র নাগরিকদের নিজের কবজায় রাখতে চায়—এমনকি ভালো উদ্দেশ্যেও—সে-ও পরে আবিষ্কার করে যে চাপের মধ্যে ক্ষুদ্র হয়ে পড়া মানবগোষ্ঠীর দ্বারা কোনো মহৎ কাজ সম্ভব নয়। মহত্ত্বের বীজ শিশু বয়স থেকেই বপন করে যেতে হয়, যা কেবল পরীক্ষার পড়া শিখে অর্জন করা যায় না, অর্জিত হয় জ্ঞানচর্চার মুক্ত পরিবেশ ও তার সঙ্গে সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে।
বিস্তৃত আলোচনার সুযোগ নেই পত্রিকার পাতায়। প্রথমে বলতে হবে, সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। সংস্কৃতি বলতে আমরা কেবল গান, নাচ, আবৃত্তি, চিত্রকলা, নাটক ইত্যাদির কথা ভাবি। আদতে এসব হলো শিল্পকলা অর্থাৎ আর্ট। সংস্কৃতি আরও ব্যাপ্ত বিষয়। সংস্কৃতিচর্চার একদিকে হলো সমৃদ্ধ জীবনবোধ অর্জন আর অন্যদিকে জীবনকে সুন্দরভাবে যাপন এবং জীবন ও জগৎকে উপভোগের সামর্থ্য অর্জন।