করোনা মহামারির দুঃসময় পেরিয়ে ‘নতুন স্বাভাবিক’ জীবনধারায় খানিকটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে অভ্যস্ত হচ্ছিলাম আমরা। এরই মধ্যে দুঃসংবাদ। প্রায় হঠাৎ করোনাভাইরাসের নতুন এক ধরনের (ভেরিয়েন্ট) কথা শোনা যাচ্ছে। এ নিয়েই বিশ্বজুড়ে তোলপাড়। করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনের নাম ‘অমিক্রন’। গত ২৪ নভেম্বর প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকায় ধরা পড়ে এই নতুন ধরনের করোনাভাইরাস, যা জিনগত দিক থেকে আগের ধরনগুলোর চেয়ে আলাদা তো বটেই, বৈশিষ্ট্যের দিক থেকেও খানিকটা ভিন্ন প্রকৃতির।
অমিক্রনের বৈশিষ্ট্য হলো ‘পুনঃসংক্রমণ’ করতে পারার সক্ষমতা। অর্থাৎ করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়া থাকলেও যে কেউ সংক্রমিত হতে পারেন নতুন এই ধরনে। একইভাবে কেউ আগে করোনা সংক্রমিত হয়ে থাকলে তাঁরও পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। জানা গেছে, ‘লার্জ নম্বর অব মিউটেশন’-এর ফলে এই নতুন ধরনের সৃষ্টি। অর্থাৎ করোনাভাইরাসের বহুমাত্রিক জিনগত পরিবর্তনই অমিক্রন সৃষ্টি করেছে। এর অন্যতম বিশেষত্ব হলো, অনেক মানুষকে দ্রুত সময়ে সহজে সংক্রমিত করতে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে ফাঁকি দিয়ে সহজেই আক্রমণ করতে পারে করোনাভাইরাসের এই ধরন।
সংক্রমণ ক্ষমতা উচ্চ হলেও এর বিধ্বংসী ক্ষমতা কতটুকু, তা নিয়ে এখনো বলার সময় আসেনি। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বলছে, অমিক্রনের সংক্রমণ খুব মারাত্মক ধরনের হয় না। তবে এ নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন (প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানীরা কাজ করে চলেছেন এর নানা দিক নিয়ে), তাই আরও তথ্য না পাওয়া অবধি অপেক্ষা করতে হবে। তবে অবশ্যই থাকতে হবে সচেতন, যাতে সংক্রমণের হারকে প্রতিহত করা সম্ভব হয়। তা না হলে আবারও স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়বে, নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, করোনা বিধিনিষেধে যেতে হলে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এই ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে পারে ব্যাপক সচেতনতা।
দক্ষিণ আফ্রিকার সীমানা পেরিয়ে ইউরোপ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে অমিক্রন। ধারণা করা হচ্ছে, সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়তে পারে এই ভাইরাস। তাই বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে জারি হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। বাংলাদেশও যেন পিছিয়ে না পড়ে। সংক্রমণের আগে আগে হাঁটতে হবে, পিছু পিছু নয়।